বর্তমানে কমবেশি সবাই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত, তাই অনলাইনে ইনকাম করার চিন্তা করে থাকেন সবাই। কিন্তু অনলাইনে ইনকাম করার উপায় না জানা থাকায়, ইন্টারনেট সুবিধা থাকলেও আয়ের পথ খুঁজে পান না। বেশিরভাগ মানুষই অনলাইনে কাজের অভাব নেই। এই তথ্যটি কিন্তু একদিকে সত্যি বলা চলে, আমাদের দেশের অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকার পরও শুধুমাত্র দরকারি তথ্যের অভাবে অনলাইনে ইনকাম করতে পারছেন না চলুন জেনে নেয়া যাক। অনলাইনে ইনকাম করার সেরা ১০ টি কার্যকরী উপায়
১. ফ্রিল্যান্সিং:
অনলাইন ইনকাম করার জন্য জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় যেটা, সেটা- ফ্রিল্যান্সিং, ফ্রিল্যান্সিং শব্দটির সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত হয়ে থাকবেন। মূলত কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত ধারার চাকরি না করে বরং স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে কাজ করার পেশাকে বলা হয়, ফ্রিল্যান্সিং। বর্তমানে অনলাইনে ইনকাম করার সবচেয়ে আলোচিত উপায় হচ্ছে, ফ্রিলান্সিং। Fiverr, upwork,এর মত ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে ফ্রিল্যান্সার যাত্রা কে আরও সহজ করে দিয়েছে। বর্তমানে ঘরে বসে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের ক্লায়েন্টের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে,ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সারের কাজের স্বাধীনতা থাকায় অনেকেই ইনকাম করার শ্রেষ্ঠ পথ বলে মনে করেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অনলাইন ইনকাম করার অন্যতম প্রধান সুবিধা বলতে হলে সকল দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ ব্যয় বলতে হবে। ধরুন, আপনি ভিডিও এডিটিং এর পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর দক্ষ সে ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট দুই ধরনের কাজ করে আপনি অনলাইনে ইনকাম করতে পারবে।
২. ইউটিউবিং:
অনলাইনে ইনকাম করার একটি সাধারণ পথ হল ইউটিউবিং। আয়ের পথ হিসেবে youtube এর কথা হয়তো আপনি অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু অনলাইন ইনকামের কথা এলেই ইউটিউবিং করে আয় এর জুটি নেই। YouTubing করে আয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু কনটেন্ট আপলোড এরপর থেকে ইনকাম করতে পারবেন এমন না। ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করতে হলে, চ্যানেলটা কে monetization করতে হয়। চ্যানেলটা কে মনিটাইজ করার জন্য 1000 সাবস্ক্রাইবার এবং 4000 ঘন্টা ওয়াচ টাইম এর প্রয়োজন হয়। যেহেতু, এ প্রয়োজনে সাবস্ক্রাইবার ও ওয়াচ টাইম করতে সময় লাগে। তার মানে ইউটিউবিং করে ইনকাম করতে প্রথমে আপনার বেশ অনেকদিন খাটতে হবে। তবে মজার ব্যাপার হলো, আপনার চ্যানেল একবারে স্পটলাইট আসলে খুব সহজে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে আপনার আয়ের পথ খুলে যাবে। ইউটিউব থেকে আয়ের একাধিক পথ রয়েছে যেমন, প্রডাক্ট প্রমোশন, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ইত্যাদি করে অসংখ্য ইউটিউবার মোটা অংকের ইনকাম করে থাকেন।
৩. ই-কমার্স:
ই-কমার্স এর মাধ্যমে অনলাইনে ইনকাম। ই-কমার্সের চাহিদার সাথে সাথে ই-কমার্স এর মাধ্যমে অনলাইনে ইনকাম করার সুযোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ই-কমার্স এর মাধ্যমে আপনার ব্যবসাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে পারেন বেশ সহজেই। বর্তমানে সকল কাস্টমারকে অনলাইনে তাঁদের পছন্দের প্রোডাক্ট খুঁজে থাকেন। অনেকে সেখান থেকে অর্ডার করে বাকি কিনে থাকে। ব্যবসা হিসেবে ই-কমার্স থেকে দূরে থাকা বিশাল একটি সুযোগ মিস করার মত। অনলাইন অসংখ্য কাস্টমার হয়তো আপনি যে প্রোডাক্ট বিক্রি করে তার খোঁজ করছে, কিন্তু আপনি অনলাইনে প্রোডাক্ট বিক্রি না করায় বা অর্ডার না নেওয়ায় জনসম্ভব কাস্টমার আপনার কাছে পৌঁছাতে পারছে না। তাই নতুন ব্যবসা হোক কিংবা ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হোক আপনাকে অবশ্যই ই-কমার্সের দিকে আসতে হবে।
৪. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট:
বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর যেহেতু বাড়ছে। তাই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন হচ্ছে, নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য এক্সপার্টেট। আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্টের দক্ষ হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে দেশে-বিদেশের প্রচুর কাজ পেতে পারেন। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর পাশাপাশি অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইট মেনটেনের জন্য লোক ভাড়া করে থাকেন। এসব কাজে পরিশ্রম হচ্ছে পারিশ্রমিক বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া ওয়েবসাইট ডিজাইন করে আয় করার বিষয়টি বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত বলাই চলে। আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট যথেষ্ট পারদর্শী হন সেক্ষেত্রে আপনার নিজেরই বিভিন্ন ওয়েব রিলেটেড প্রডাক্ট তৈরি করে বিক্রি করতে পারেন। যেমন, আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস কোডিং এর ক্ষেত্রে দক্ষ হন। সেক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য থিম বা প্লাগিন তৈরি করে অসাধারণ আয় করতে পারেন।
৫. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন:
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন হল, ডেভলপমেন্ট এসম্পর্কিত আরেকটি মান্ডিং স্কিল। আপনি যদি SEO এর ক্ষেত্রে দক্ষ হন সেক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের SEO এর কাজ করো ভালো অংকের অর্থ আয় করতে পারবেন।
৬. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং:
মূলত অন্যের প্রোডাক্ট প্রমোট ও বিক্রি করার প্রক্রিয়াকে বলা হয়, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। অর্থাৎ অন্যজনের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস আপনি আপনার ওয়েবসাইট সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রমোট করবেন। আপনার এফিলিয়েট লিংক থেকে তৈরি হওয়া অথবা লিট সেস অথবা লিংক এর ক্লিক এর জন্য আপনিও কমিশন পাবেন। এটি মূলত আফিলিয়েট মারকেটিং এর ধারণা। বর্তমানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট ও সার্ভিস নেয়ার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার সুযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় হচ্ছে,Amazon অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম।
৭. অনলাইন ফটোগ্রাফি:
ফটোগ্রাফির মাধ্যমে অনলাইনে ইনকাম। ফটোগ্রাফি করে আয় এর কিন্তু একাধিক কার্যকর পথ রয়েছে। অনলাইনে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আয় করা সম্ভব। প্রথমত;- স্টপ ফটোগ্রাফি করে সেসব ফটো বিভিন্ন ফটোগ্রাফি সোসাইটি দিয়ে আয় করা সম্ভব। এছাড়া বিভিন্ন ফটোগ্রাফি সম্পর্কিত ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস প্রদান করে আয় করা সম্ভব।
৮. ব্লগিং:
ব্লগিং করে অনলাইনে ইনকাম। অনলাইনে ইনকামের আরেকটি সাধারণ উপাধ্যায় ব্লগিংকে। ব্লগিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে আপনার পছন্দের বিষয় কনটেন্ট লিখে অর্থ আয় করতে পারেন। ব্লগিং শুরু করতে প্রয়োজন পড়বে একটি ওয়েবসাইটের। আপনি চাইলেও ব্লগিং শুরু করতে পারেন। তবে ডোমেইন ও হোস্টিং কিনে নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করলে সেক্ষেত্রে আপনার ব্লগের সম্পূর্ণ মালিকানা আপনার কাছে থাকবে। রঙের ক্ষেত্রে একাধিক উপরে অনলাইনে আয় করা সম্ভব। প্রথমত, আপনার ব্লগে অ্যাড দেখিয়ে আয় করতে পারবেন। গুগল এডসেন্স বা অন্য কোনো নেটওয়ার্কের সাহায্যে ব্লগে যুক্ত করে ব্লগের কনটেন্ট
মনেটাইজ করতে পারবেন। এছাড়া ব্লগে কনটেন্ট এর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুযোগ তো থাকছেই।
৯. সোশ্যাল মিডিয়া:
সোশ্যাল মিডিয়া আমরা প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকি। এই সোশ্যাল মিডিয়া কিন্তু অনলাইন ইনকামের প্রধান একটি মাধ্যম হতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অনলাইন ইনকামের ক্ষেত্রে এই তালিকার একাধিক উপায় কাজ করে আসতে পারে। যেমন;-ফেসবুক, বর্তমানে কমার্স প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেশ ভালো প্রদান রাখছে। আবার আপনি ব্লগিং করলে তার প্রমোশনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে অনলাইনে ইনকামের প্রধান ট্রাফিক উচ্চতা করেছে।
১০. ডিজিটাল মার্কেটিং:
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে অনলাইনে ইনকাম। ডিজিটাল যুগে এসে ডিজিটাল ব্যাংকিং এর জল আকাশছোঁয়া হবে, সেটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে ব্যাপক হারে ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা বেড়েছে। আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে দক্ষ হন,তাহলে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তো বটেই। এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির বিনিময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এ কাজ করতে পারবে।
১১. অনলাইন কোচিং:
বর্তমানে ইন্টারনেট কল্যাণে শেখার অন্যতম মাধ্যম পরিণত হয়েছে অনলাইন কনটেন্ট সমূহ। আপনি যদি কোনো বিষয়ে পারদর্শী হয়ে থাকেন, তাহলে অন্যকে তা শিখিয়ে ভালো অংকের অর্থ আয় করতে পারেন। এছাড়া আপনার যে বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে, তা নিয়ে আপনি কোর্স তৈরি করতে পারেন। বর্তমানে অনলাইন কোর্স সম্বন্ধে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও ইউটিউবে বিভিন্ন বিষয় শেখার মাধ্যমে আয় করার সুযোগ তো থাকছেই।
সর্বশেষ কথা:-
অনলাইনে ইনকামের উল্লেখিত ১১ টার মধ্যে আপনার পছন্দ কোনটি? আমাদেরকে জানান কমেন্ট সেকশনে। অনলাইন ইনকাম সম্পর্কে আপনার কোনো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট সেকশনে ও জানাতে পারেন। তো পাঠক আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছে আবারো নতুন কোন পোস্টে আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে সেই পর্যন্ত নিজের খেয়াল রাখবেন এবং সব সময় ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।

