সোশ্যাল মিডিয়া দৈনন্দিন জীবনের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছে এই সোশ্যাল মিডিয়া শব্দটি। যা যা বাংলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবেও পরিচিত। ইন্টারনেট ব্যবহার করেন কিন্তু কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝুক্ত নেই এমন মানুষ এখন নেই বললেই ভুল হবে না। সোশ্যাল মিডিয়া গুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, কোনটি ওয়েবসাইট নির্ভর, আবার কোনোটি হয়তো মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন নির্ভর। কোন সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু একে অপরের সাথে যোগাযোগ করার সুবিধা দিয়ে থাকে, আবার কোনোটি হয়তোবা ভিডিও দেখার সুযোগ দেয়, কিন্তু আমাদের আজকের পোস্টটিতে আমরা একটি ভিন্নধর্মী এবং গুরুত্বপূর্ণ সোশ্যাল মিডিয়া পিন্টারেস্ট সম্পর্কে জানব।
পিন্টারেস্ট কি? এবং কেন ব্যবহার করবেন?
পিন্টারেস্ট একটি ইমেজ শেয়ারিং এবং সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক, অন্যান্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মতো এখানেও আপনি ইমেজ ভিডিও লিংক এনিমেশন ইত্যাদি পোস্ট করতে পারবেন। পিনটারেস্ট তার কাজের ধরনের দিক থেকে অনেকটাই আলাদা। এখানে আপনি নিজের ইচ্ছে মত পোস্ট সেভ করে রাখতে পারবেন, অর্থাৎ পিনটারেস্ট আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় অনলাইন প্রডাক্ট স্টোর করে রাখার সুবিধা দেয়। ডিজিটাল পণ্য যেমন:- মর্ডান আর্ট, ইন্টেরিয়র ডিজাইন কনসেপ্ট, পার্সোনাল প্রোডাক্ট ইত্যাদি মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবেন।
পিন্টারেস্ট ব্যবহার করবেন কিভাবে?
আপনি মোবাইলের অ্যাপের মাধ্যমে পিনটারেস্ট এর সকল সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন, পপুলারিটির দিক দিয়ে পিন্টারেস্ট টপ টেন সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক এর মধ্যে অন্যতম। এখানে পার্সোনাল থেকে সার্ভিস কে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। পুরো ওয়েবসাইটটি একদম ফ্রি এবং কোন ফিচার ব্যবহার করার জন্য আপনাকে কোন টাকা খরচ করতে হবে না। আপনি আপনার প্রোফাইল বোর্ড তৈরি করে সেখানে আপনার সার্ভিস পিন আকারে সাজিয়ে রাখতে পারবেন, ব্যাপারটা অনেকটাই স্কুল কলেজের নোটিশ বোর্ড এর মত কাজ করে। একটি পিন আপনি একদম নিজের মতো করে সাজাতে পারবেন, টাইটেল এবং ডেসক্রিপশন ভালো করে অপটিমাইজ করতে পারলে, আপনার পিন পিন্টারেস্ট বাদেও গুগলে রেঙ্ক করবে। বিশেষ করে গুগল রেঙ্ক করার ক্ষেত্রে ফেসবুকের পরেই পিনটারেস্ট এর স্থান। মোটকথা পিন্টারেস্ট আপনার এবং আপনার সার্ভিসের মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য পারফেক্ট।
পিন্টারেস্ট এর ইতিহাস:
পিন্টারেস্ট এর প্রতিষ্ঠাতা (বেন সিলবারমান) তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করেন মেডিকেল স্টুডেন্ট হিসেবে, কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন ডাক্তার হওয়া তার মনের ইচ্ছা না, সে জীবনে অন্য কিছু করতে চায় যা তাকে আনন্দ দেবে। এরপর তিনি নিজেকে কনসাল্টিং পেশায় নিযুক্ত করেন, কিন্তু সেখানে তার একদম মন বসছিল না, তখন তিনি সিলিকন ভ্যালিতে যান এবং গুগলে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। কিন্তু সেখানেও তাকে গুগলের অনলাইন এডভার্টাইজিং গ্রুপে কাজ করতে হয়। তখন তিনি গুগলের চাকরি ছেড়ে দেয়, এবং তার আরেক বন্ধু কে নিয়ে দুজনে মিলে একটি আইফোন অ্যাপ তৈরি করেন। দুঃখজনকভাবে তাদের মার্কেটে তেমন ভাল করতে পারেনি, এখানে ব্যর্থ হওয়ার পর তার আরেক বন্ধু পল সেহারা সহ তিনজন মিলে ২০০৯ সালে পিনটারেস্ট এর বেটা রিলিজ করেন।
এরপর ২০১০ সালে চূড়ান্তভাবে তারা পিনটারেস্ট রিলিজ করেন। রিলিজ হওয়ার পর প্রথম ৯ মাসে তাদের ইউজার সংখ্যা ছিল মাত্র ১০,০০০, এদের মধ্যে ৫ হাজারের মতো ইউজার বেন সিলবারমান নিজে কানেক্ট করে। তিনি ৫,০০০ মানুষকে পার্সোনাল ভাবে মেইল করে এবং নিজের পার্সোনাল ফোন নাম্বার শেয়ার করে, এদের মধ্যে বেশির ভাগের সাথে তিনি সরাসরি মিটিং করেন। এবং পিন্টারেস্ট ইউজ করতে বলেন, যাইহোক ২০১১ সালের দিকে তারা পিন্টারেস্ট আই ফোনে রিলিজ করে, আশ্চর্যজনকভাবে দ্রুত পিন্টারেস্ট অ্যাপ ডাউনলোড হতে থাকে, টাইম ম্যাগাজিনে তাদের ২০১১ সালের ৫০ টি বেস্ট ওয়েবসাইট নামক আর্টিকেলে পিনটারেস্ট এর নাম ঘোষণা করে। ২০১১ সালের শেষের দিকে ১০টি বড় সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সার্ভিসের তালিকায় পিনটারেস্ট এর নাম আসে। ২০১২ সালের শুরুর দিকে একটি অনলাইন রিপোর্টে বলা হয় যে সেই সময়ের পিন্টারেস্ট ১১.৭ মিলিয়ন ইউনিক ভিজিটর ছিল। যা নতুন ওয়েবসাইটের এত তাড়াতাড়ি এত পরিমান ইউনিক ভিজিটর কখনো পায়নি। সে দিক থেকে পিনটারেস্ট একটি রেকর্ড।
পিন্টারেস্ট থেকে ইনকাম করার উপায়:
পিন্টারেস্ট সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায় চলুন এবার দেখে নেয়া যাক। পিন্টারেস্ট থেকে আপনি দুই ভাবে ইনকাম করতে পারেন।
(১) ব্লগিং
অনেক অনেক ব্লগার রয়েছেন যারা পিন্টারেস্ট সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ ট্রাফিক নিয়ে যাই তাদের ওয়েবসাইটের মধ্যে। এবং google এডসের মাধ্যমে অনেক টাকা ইনকাম করে, আপনার ওয়েবসাইটটি যদি গুগলেও রেঙ্ক না করে। ফাস্ট পেজে না আসে তারপরও আপনি পিন্টারেস্ট এর মাধ্যমে ভালো পরিমাণের একটা ট্রাফিক আপনার ওয়েবসাইটে আনতে পারবেন। সারা পৃথিবীতে অনেক ব্লগার রয়েছে যারা শুধুমাত্র
পিন্টারেস্ট এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ ট্রাফিক নিয়ে থাকে। আবার অনেকে ইউটিউব চ্যানেলেও ট্রাফিক নিয়ে থাকে। আপনার যদি ব্লগিং ওয়েবসাইট থাকে অথবা ইউটিউব চ্যানেল থাকে, তাহলে আপনি পিন্টারেস্ট এর মাধ্যমে খুব সহজেই ট্রাফিক নিতে পারবেন। এবং খুব সহজেই আপনি ইনকাম করতে পারবেন।
(২) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং:
এছাড়াও আপনি এফিলিট মার্কেটিং করেও প্রচুর পরিমাণ ইনকাম করতে পারেন, তবে এর জন্য অবশ্যই আপনার একটা ওয়েবসাইটের প্রয়োজন হবে। সো এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন ব্লগিং করতে পারেন এই পিন্টারেস্ট কে ব্যবহার করে। এছাড়াও পিন্টারেস্ট এর মাধ্যমে আপনি ইনডাইরেক্টলি ও ইনকাম করতে পারবেন আর সেটি হচ্ছে পিন্টারেস্ট এর সার্ভিস সেল করে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলো যেমন ফাইবার, ফ্রিল্যান্সার, এছাড়াও আরো যে সকল ফ্রিল্যান্সার মার্কেটপ্লেস রয়েছে, সেই মার্কেটপ্লেসগুলোতে আপনি খুব সহজেই পিন্টারেস্ট এর সার্ভিস গুলো সেল করে ইনকাম করতে পারবেন।
আপনি যদি পিন্টারেস্ট এ দক্ষ হন তাহলে আপনি খুব সহজেই বিভিন্ন পদে যেমন:- পিন্টারেস্ট অ্যাড ম্যানেজার, পিন্টারেস্ট মার্কেটের, পিন্টারেস্ট ইনক্রেটার, পিন্টারেস্ট এসইও, ইত্যাদি এরকম হাজারো সার্ভিস কিন্তু আপনি বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে সেল করতে পারবেন। তো এছাড়াও আরো অনেকভাবেই আপনি পিন্টারেস্ট থেকে ইনকাম করতে পারবেন সেগুলি আপনি ভবিষ্যতে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারবেন আশা করছি। আশা করছি আপনি বেসিক একটা ধারণা পেয়েছেন যে আসলেই কিভাবে পিন্টারেস্ট কে ব্যবহার করে আপনি ইনকাম করতে পারেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
পিন্টারেস্ট সম্পর্কে কিছু কথা:
পিনটারেস্ট সবথেকে বেশি ইউজ করে নারীরা, সর্বোচ্চ রিপোর্ট অনুযায়ী মোট ইউজার এর মধ্যকার ৬০ শতাংশ নারী এবং বাকি ৪০ শতাংশ পুরুষ। পিনটারেস্ট আউট ফিট, হোম ডেকোরেশন, নিউ স্টাইল, ফুট রেসিপি ইত্যাদিতে বেস পপুলার। সময়ের সাথে সাথে তারা তাদের ওয়েবসাইটে কিছু পরিবর্তন আনে, শুরুর দিকে তাদের কাজ ছিল শুধু আইডিয়া সংগ্রহ করার প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু পরবর্তীতে তারা তাদের টামস চেঞ্জ করে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং ই-কমার্স মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মে রূপান্তর করে, অর্থাৎ পিনটারেস্ট এখন একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং ই-কমার্স প্রোডাক্ট মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম।
পিনটারেস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে রিলিজ হয় ২০১০ সালে এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ১০ বছরের পথ পাড়ি দিয়েছে পিন্টারেস্ট, পিন্টারেস্ট এর বর্তমান মার্কেট প্রাইস ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তারা পাবলিক কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং এরপর প্রতি শেয়ারের মূল্য ১৯ ডলার নির্ধারণ করে। পিন্টারেস্ট এর সদর দপ্তর ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিস্কো শহরে। শুরুতে ইন্টারেস্ট একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পরিচালিত হতে থাকলেও, বর্তমানে তাদের মোট কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১৬০০ জন। ২০১২ সালে সফলতার পর ধীরে ধীরে ইনভেস্টরস পিনটারেস্ট এ ইনভেস্ট করা শুরু করেন, তারপর থেকে নিয়মিতভাবেই নতুন নতুন ইনভেস্টমেন্ট পাচ্ছে পিন্টারেস্ট। এখন পর্যন্ত পিনটারেস্ট লাইভ স্টার, মেকার মিটার, ইউ আর এক্স, ইনিস্টা পেপার এবং জেলি ইন্ডাস্ট্রি নামক কোম্পানি এবং সার্ভিস অধিগ্রহণ করেছেন। পিন্টারেস্ট এর একমাত্র আয়ের উৎস হলো স্পন্সর বা প্রমোটেড পিন।
অর্থাৎ কোন কোম্পানির বিজনেস তাদের নিজেদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস পিন আকারে সার্চ পেজ অথবা প্রফাইল পেজ দেখানোর জন্য পিন্টারেস্ট কে পে করেন। এই পদ্ধতি ইউজ করেই তারা আয় করেন, এছাড়া তাদের আরো একটি মেথড আছে যেখানে কিছু ই-কমার্স ওয়েবসাইট এর সাথে তাদের চুক্তি হয়েছে, উক্ত চুক্তির আওতায় পিন প্রমোট করে পিন্টারেস্ট এর রেভিনিউ করে। আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
সর্বশেষ কথা:- তো পাঠক আশা করছি আপনি আমাদের এই পোস্টটি পড়ে পিন্টারেস্ট সম্পর্কে একটি বেসিক ধারণা পেয়ে গিয়েছেন অলরেডি। এরপরও এই সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন আমরা চেষ্টা করব আপনার কমেন্টের উত্তর দেয়ার জন্য। পোস্টটি কেমন লাগলো আপনার কাছে সেটি অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। আর এই পোস্টটি শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কাছেও ছড়িয়ে দিবেন। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি দেখা হবে আবারও ইন্টারেস্টিং কোন পোস্টে সবার সাথে সে পর্যন্ত নিজের খেয়াল রাখুন ধন্যবাদ।

